কাঠমান্ডুর রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে কানায় কানায় পূর্ণ। ‘নেপাল’, ‘নেপাল’ স্লোগান যেমন দিচ্ছিলেন, তেমনি অনেকের হাতেও দেখা যায় নেপালের পতাকা। রঙ্গশালায় সেই উৎসবমুখর পরিবেশ ম্লান দিয়েছেন বাংলার বাঘিনীরা। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই পিনপতন নীরবতা স্টেডিয়ামে। কারণটা ঘরের মাঠে আবারও শিরোপা ভঙের বেদনা। ঠিক তখনই আনন্দের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের পাহাড় থেকে সমতল সর্বত্রে। আবারও সেই নেপাল, সেই কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়াম— দুই বছর পর দেখা গেল ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। ২-১ ব্যবধানে নেপালকে হারিয়েছে ঋতুপর্ণারা। নারী সাফে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতে হিমাদ্রির শিখরে বঘিনীরা।
হিমালয় জয়ের নেতৃত্ব দিলেন বাংলাদেশের পাহাড়ি কন্যারা। টান টান ম্যাচে ভাগ্য গড়ে দিলেন দুই চাকমা তনয়া- মনিকা ও ঋতুপর্ণা। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে গোল দুটির প্রথমটি ৫১ মিনিটে করেন খাগড়াছড়ির মেয়ে মনিকা চাকমা। দ্বিতীয় গোলটি ৮১ মিনিটে করেন রাঙামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা। ফাইনালে ঋতুপর্ণার জয়সূচক গোলে সাফ শিরোপা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এবারের সাফে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। টুর্নামেন্টে করেছেন ২ গোল। সেটার চেয়েও বড় ‘ইমপ্যাক্ট’ তিনি রেখেছেন গোল বানিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে।
এদিকে এবারও সাফের সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন রাঙামাটির মেয়ে রূপনা চাকমা। টুর্নামেন্টজুড়ে গোলপোস্ট সামলেছেন ‘চীনের মহাপ্রাচীরের’ মতো। ফাইনালেও ছিলেন দুর্দান্ত। এর আগে ২০২২ নারী সাফেরও সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জিতেছিলেন রূপনা। সবমিলে পাহাড়ি কন্যাদের গোল ও গোল রক্ষায় শিরোপা ধরে রাখার স্বপ্ন উজ্জ্বল করল বাংলাদেশের। সাফের দুই সেরা পুরস্কারও দখলে নিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের মেয়েরাই।
‘আঁরার মাইয়্যা জিতাইয়্যে’
‘আঁরার মাইয়্যা আবার জিতাইয়্যে, খুব খুশি লার আঁরাত্তুন’— সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ের পর খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ির প্রত্যন্ত সুমান্ত পাড়ার বাসিন্দা অসীম চাকমা এভাবেই তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। খাগড়াছড়ির দুর্গম উপজেলা লক্ষ্মীছড়ির সুমান্ত পাড়ায় মনিকা চাকমার বাড়ি হওয়ায় আনন্দ–উচ্ছ্বাস আরেকটু বেশি। সবার কণ্ঠে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ তাদের কিছুটা বেশি। কারণ ফাইনালে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম গোলটি দিয়েছেন এই গ্রামের মেয়ে মনিকা চাকমা। জয় সূচক গোলটি দিয়েছেন পাহাড়ের আরেক মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা।
মনিকার গ্রাম দুর্গম সুমান্ত পাড়ার বাসিন্দা কিরণজয় চাকমা ও কুহেলি চাকমা গণমাধ্যমকে দেয়া এক বক্তব্যে জানান, এর আগেও মনিকা চাকমা বাংলাদেশকে জিতিয়েছে। টানা দ্বিতীয়বারের সাফ নারী চ্যাম্পিয়নে আমাদের মেয়েরা জয় এনেছে। আমাদের খুব গর্ব হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল মনিকা গোল করবে। তা সত্যি হলো।
মনিকার বাবা বিন্দু কুমার চাকমা বলেন, ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি ভীষণ প্রিয় মনিকার। বাবা–মা হিসেবে প্রথমে মেনে নিতে পারিনি। এজন্য প্রায় সময় মারও খেতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু আমরা এখন মনিকাকে নিয়ে গর্বিত। ফুটবল খেলার মাধ্যমে মনিকা এখন সারাদেশে এলাকার সুনাম বাড়িয়েছে। খুব আনন্দ হচ্ছে আমাদের।
টানা দ্বিতীয় বার সাফ জয় করে দেশে ফেরা বাঘিনীদের ছাদ খোলা বাসে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তবে পাহাড়ের তিন খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা, রূপনা ও মনিকাকে খোলা ট্রাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। ছুটি শেষে নিজ জেলায় ফিরলেই তাদের এই সংর্বধনা দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, দেশে ফিরলে মনিকা চাকমাকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হবে।
আমরা জানতে চেষ্টা করবো ঋতুপর্ণা, রূপনা ও মনিকার গল্প—
ঋতুপর্ণা চাকমা
সেদিন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর ঋতুপর্ণা বলেছিলেন, আমার কপালে গোল জোটে না।— সেই তিনি বুধবার ফাইনালের পর হস্যোজ্জ্বল মুখে বললেন, ‘আমি ভাবতেই পারিনি, টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার পেয়ে যাব। দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তাতে আমি অবদান রাখতে পেরে এমনিতেই ভালো লাগছে। সেই ভালো লাগা বলতে পারেন অনেকটা বেড়ে গেছে টুর্নামেন্ট সেরা হয়ে।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই দারুণ খেলেছেন। নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে বাংলাদেশের জয়ের নায়কও তিনি। ঋতুপর্ণা চাকমা লাজুক স্বভাবের হলেও মেয়েটিই মাঠে একেবারে অন্য রকম। বুধবার কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে ঋতুপর্ণা কী অসাধারণ খেলাটাই না খেললেন। তাঁরই দুর্দান্ত এক গোলে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফের শ্রেষ্ঠত্ব বাংলাদেশের।
চার বোনের মধ্যে চতুর্থ ঋতুপর্ণা। টানা চতুর্থবারের মতো কন্যাসন্তান হওয়ায় বাবা-মা একটু মন খারাপই করেছিলেন। কিন্তু কে জানত, সেই মেয়েই তাঁদের মুখ উজ্জ্বল করবে ফুটবল খেলে!
রাঙামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা ২০১২ সালে স্থানীয় মগাছড়ি স্কুলের হয়ে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে প্রথম অংশ নেন। খেলেন পরের বছরও। বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে প্রথম সুযোগ পান ২০১৭ সালে, অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলে। ২০২১ সালে ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিলেন ২ গোল। ২০২২ সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলের অংশ ছিলেন তিনি।
বাবা ব্রজবাসী চাকমা চাইতেন মেয়ে বড় ফুটবলার হবেন। অভাবের সংসারেও মেয়ের অনুশীলনের জন্য যাতায়াতের খরচ দিতেন। ২০১৫ সালে ক্যান্সারে ভুগে মারা যান বাবা। ঋতুপর্ণার একমাত্র ভাই পার্বণ চাকমাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন দুই বছর আগে। এখন ফুটবল দিয়েই যেন সব দুঃখ ভুলতে চান ঋতুপর্ণা।
রুপনা চাকমা
বাংলাদেশের সাফল্যের নেপথ্যে আরেকজন গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। এবারে খেলায় চোখ কেড়েছেন রুপনাও। ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে তাঁর কিছু সেভ বড় ভূমিকা রেখেছে। এ কারণে পুরস্কারটা পেয়েছেন রুপনা। এবার সাফের সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন রাঙামাটির এই মেয়ে। ২০২২ সালের সাফেও তিনি টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন।
বুধবার শিরোপা জেতার পর পুরস্কার হাতে নিয়ে রুপনা বলেন, আমরা ঢাকা থেকে এসেছিলাম শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি। এটাই আসলে বড় প্রাপ্তির।
একটা সময় গোলরক্ষক রুপনা চাকমা ডিফেন্ডারদের ওপর আস্থা রাখতে পারতেন না। হুটহাট করেই জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসতেন। আর এমন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে ভুগতে হতো বাংলাদেশ দলকে। অথচ সেই রুপনাই যেন একেবারে বদলে গেলেন ২০২২ সালের সাফে। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেছেন। কখনো ফিস্ট করে, কখনো জায়গায় দাঁড়িয়ে লাফিয়ে বল লুফে নিয়েছেন। এবারও সেই গৌরব ধরে রেখেছেন। টানা দুইবার সাফে সেরা গোলক্ষকের পুরস্কার এই পাহাড়ি কন্যার দখলে।
রুপনার বাবা নেই। মা কালাসোনা চাকমা তাঁকে ফুটবল খেলতে উৎসাহ জুগিয়েছেন। ২০১১ সালে প্রথমবার রাঙামাটি জেলা স্টেডিয়াম মাঠে রুপনার খেলা দেখে মুগ্ধ হন স্থানীয় মগাছড়ি স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীর সেন। ওই সময় রুপনা পড়তেন রাঙামাটির নানিয়ারচরের ভুয়াদম গ্রামের স্কুলে। বীর সেন রুপনার মাকে রাজি করিয়ে মগাছড়ি স্কুলে ভর্তি করিয়ে নেন। রুপনার পড়ালেখা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন স্থানীয় কোচ শান্তিমনি ও সুইহ্লা মং। স্কুলের একটি কক্ষে অন্য মেয়েদের সঙ্গে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। স্কুল টুর্নামেন্টে নিজেকে প্রমাণ করে বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় দলে ২০১৮ সালে প্রথম খেলেন রুপনা। এরপর টানা চার বছর খেলছেন বয়সভিত্তিক ও জাতীয় দলে।
রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে ভূঁইয়ো আদাম গ্রামে রুপনা চাকমার বাড়ি। ঢালু পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তা বেয়ে রুপনার বাড়িতে যেতে হয়। একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে বসবাস করত রুপনার পরিবার। প্রথম সাফ জয়ের বছরে বাংলাদেশের মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রুপনা চাকমার জীর্ণ ঘর নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে রুপনার পরিবারের জন্য নতুন ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মনিকা চাকমা
এবারের সাফ ফাইনালের সপ্তাহখানেক আগে নারী চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানের সঙ্গে ১-১ ড্র ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন খাগড়াছড়ির মেয়ে মনিকা। পরদিন টিম হোটেলে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে পাকিস্তান-ম্যাচের ব্যর্থতার কথা বলতে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্যও করে বসেছেন তিনি। মনিকা বলেন, আসলে আমাদের হেড কোচ মারিয়া, মাসুরা আপু, কৃষ্ণাদি— তাদের পছন্দই করে না। তাদের নামাবেই না সে। আমরা সিনিয়র খেলোয়াড়েরা গিয়ে কথাও বলেছিলাম যে কেন নামাচ্ছেন না, কী কারণ, আমাদের টিমের স্বার্থের জন্য ওদের প্রয়োজন আছে। আমরা যদি জিততে চাই, তাহলে ওদের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। এই কথাগুলো বলেছিলাম আমরা সিনিয়র কয়েকজন গিয়ে। এরপরও উনি মানেনি।
এমন বিস্ফোরক মন্তব্যের সপ্তাহ যেতে না যেতেই সাপের শিরোপা ধরা দিয়েছে মনিকার হাতেই। নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে বাঘিনীরা। তন্মধ্যে মনিকার প্রথম গোলেই এগিয়ে যায় ম্যাচ।
খাগড়াছড়ির দুর্গম এলাকা বলা হয় লক্ষ্মীছড়ি উপজেলাকে। সবদিক থেকে পিছিয়ে থাকা উপজেলাটি এখন দেশে পরিচিত নাম। কারণ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় মনিকা চাকমার বাড়ি এখানে। মনিকার ফুটবল কৃতিত্বে স্থানীয়দেরও গর্বের শেষ নেই। গর্ব হবেই না বা কেনো। নিজ জেলার সন্তানের নান্দনিক খেলায় যে মাতোয়ারা ফুটবল বিশ্ব।
তবে তার খেলার এই দীর্ঘ পথ মোটেও সহজ ছিল না। কৃষক বিন্দু কুমার চাকমা ও রবি মালা চাকমার পাঁচ মেয়ের মধ্যে মনিকা সবার ছোট। বাবার চাওয়া ছিল শেষের সন্তানটি ছেলে হবে। কিন্তু মেয়ে হওয়ায় তাকে দত্তক দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু মায়ের কারণে তা আর হয়নি। ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি ছিল মনিকার দুর্বলতা। কিন্তু বাবা তা পছন্দ করতেন না। বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ফুটবলে মেতে থাকতো মনিকা। খেলায় সঙ্গী ছিলেন বড় বোন অনিকা চাকমা। যদিও একটা পর্যায়ে অসুস্থতার কারণে অনিকা আর খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি।
২০১১ সালে লক্ষ্মীছড়ির মরাচেঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে প্রথম বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলে মনিকা। ২০১২ সালে চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলতে গেলে রাঙামাটি মগাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বীর সেন চাকমার নজরে আসেন তিনি। পরিবারকে বুঝিয়ে বীর সেন মনিকাকে নিয়ে যান রাঙামাটি। সেখানে মগাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ২০১৩ সালে স্কুলটির হয়ে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলে জাতীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হন তারা। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট থেকে উঠে আসা সেই মনিকাই এখন দেশের নারী ফুটবলের অন্যতম বড় মুখ। সূত্র পাহাড় সমুদ্র
পাঠকের মতামত